স্কেচ: লেখক।
বিরিয়ানি নিয়ে অনেকেরই অদ্ভুত আকাঙ্ক্ষা আছে। যাঁরা কাল্পনিক রস ও অনির্বচনীয় ‘আনন্দ’ নিয়ে চর্চা করেন, তাঁরা এই বস্তুটিকে অনুঘটক মানেন। যেমন প্ল্যানচেটে মিডিয়াম, কীর্তনে খোল, ডিজে-তে ধমাস-ধাঁই, তেমনই ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য ও অতীন্দ্রিয় রসের নিষ্পত্তিতে এই ‘খানা’টি।
মাটন, চিকেন ইত্যাদি ইত্যাদি হয়ে ভাগাড় ঘুরে কাউয়া হয়েও এঁর লোকপ্রিয় জনরঞ্জক মাদকতা যুগপত্ ‘ক্লাস’ ও ‘মাস’কে আমোদিত করে রেখেছে। ষাঁড় লালরঙা কাপড় দেখে যেমন চপল হয়ে ওঠে রক্তবস্ত্রে পরিবৃত হাঁড়ি দেখে জনতাও খানিক তেমনতর হয় বৈকি। অনুরাগে জড়ানো এই আন্দোলনকেই বিপ্লব বলে। আর তার ফসল হল জুলাই মাসের প্রথম রবিবারে ‘বিশ্ব বিরিয়ানি দিবস’-এর উদযাপন।
আরও পড়ুন:
হুঁকোমুখোর চিত্রকলা, পর্ব-৩: ব্যা ব্যা ব্ল্যাক শিপ
ক্যাবলাদের ছোটবেলা, পর্ব-৫: আমার পায়ে ঝিঁ ঝিঁ, আমি জ্ঞান হারিয়েছি
প্রাচীন পূর্বপুরুষরা নাকি পলান্ন পক্ব করে উদরসাৎ করে ব্রহ্মাস্বাদসহোদর তৃপ্তি উপভোগ করতেন। সেই তৃপ্তি অধিকতর নাকি বিরিয়ানি তুলনায় মহত্তর সেই চর্চা রন্ধনমোদী জনগণের উৎসাহ উদ্রেক করে বটে, কিন্তু যাঁরা রন্ধনবিমুখ অথচ মুখ ও জিহ্বাচালনায় তৎপর, অধিকন্তু প্রাতরাশ থেকে নৈশভোজনে অক্লেশে ওই রসে বশ থাকেন তাঁদের জন্যই এই দিবস। নিদ্রিত বিড়াল যেমন স্বপ্নেও মত্স্যাকুল হয়, ভ্রমর যেমন স্বর্ণময় মধুভাণ্ড ফেলে কমলগন্ধে উদ্বেলিত হয়ে পদ্ম উপবনে ছুটে যায়, তেমনই ব্যাকুলপ্রাণ রসিকের দল এই ‘বিরিয়ানি ডে’ তে ‘বিরিয়ানি দে’ বলে অনায়াসেই উদ্বাহু হতে পারেন।
আরও পড়ুন:
পঞ্চমে মেলোডি, পর্ব-১৮: মনে পড়ে পঞ্চমের কণ্ঠে শোলে ছবির সেই বিখ্যাত ‘মেহবুবা মেহবুবা…’ গানটি?
এই দেশ এই মাটি, সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-৩: সুন্দরবনে মানুষের আদি বসতি
তবে ভক্তজনগণ ভক্তির বাহুল্যে কখনও কখনও ‘বিরিয়ানি’র ‘র’কে পরিপক্ব করে যখন ‘ড়’-যোগে ‘বিড়িয়ানি’ করে দেন তখন চারদিক কেমন যেন ধোঁয়া ধোঁয়া লাগে। তবে হাঁড়ি থেকেও ধোঁয়া বেরোয় বটে, ফরমায়েশ মতো আলু, আন্ডা, লেগ বেরোয়, চেষ্টার ত্রুটি না থাকলে চেস্ট, ব্রেস্ট-ও। হাফ, ফুল, স্পেশাল, ডাবল করে করে কতো তার বৈচিত্র্য। সেই বিরিয়ানি পরিবেশনে যাঁরা আত্মনিবেদন করেন তাঁদের হস্তমুদ্রার শিল্প বাবুর্চির তুলনায় কখনোই কম নয় এ হলফ করে বলা যায়।
আরও পড়ুন:
উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৪১: কান্না হাসির দোল দোলানো ‘একটি রাত’
এগুলো কিন্তু ঠিক নয়, পর্ব-২৬: মাছের তেল হার্ট অ্যাটাক আটকায়?
এই খাদ্যের পাকপ্রণালী কি আর সেই প্রণালীতেই সেই সর্বজনীন ভোজ্য প্রস্তুত হচ্ছে কিনা সেই বিবেচনা বৃথা। অশ্বত্থামা-ও দুধ ভেবে আটাগোলা, অপু-ও মোহনভোগ ভেবে সুজির পায়স খেতো। আমরাও রকেট ভেবে বাসেই উঠি, দু’পশলা বৃষ্টি হলেই বর্ষা এল ভাবি। অতয়েব, হায়দরাবাদ থেকে কামরাবাদ, নামজাদা থেকে ঝণ্টুদা,’ ‘এস্পেশাল’ থেকে ‘কাউয়া’, সব ওই লাল হাঁড়ির অতলে মায়া ছড়ায়। কবি এসব ভেবেই লিখেছিলেন “চিত্ত মম যখন যেথায় থাকে/ সাড়া যেন দেয় সে তব ডাকে”…
তবে এসবে যদি অন্য ‘ডাক’ আসে তাহলে… হেই সামালো প্রাণ হো… কালিদাস এসব ভেবেই বলেছিলেন “শরীরমাদ্যং খলু ধর্মসাধনম্”।
তবে এসবে যদি অন্য ‘ডাক’ আসে তাহলে… হেই সামালো প্রাণ হো… কালিদাস এসব ভেবেই বলেছিলেন “শরীরমাদ্যং খলু ধর্মসাধনম্”।
* ক্যাবলাদের ছোটবেলা (kyablader-chotobela): লেখক: ড. অভিষেক ঘোষ (Abhishek Ghosh) সহকারী অধ্যাপক, বাগনান কলেজ। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃত বিভাগ থেকে স্নাতকস্তরে স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত। স্নাতকোত্তরের পর ইউজিসি নেট জুনিয়র এবং সিনিয়র রিসার্চ ফেলোশিপ পেয়ে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃত বিভাগে সাড়ে তিন বছর পূর্ণসময়ের গবেষক হিসাবে যুক্ত ছিলেন। সাম্বপুরাণের সূর্য-সৌরধর্ম নিয়ে গবেষণা করে পিএইচ. ডি ডিগ্রি লাভ করেন। আগ্রহের বিষয় ভারতবিদ্যা, পুরাণসাহিত্য, সৌরধর্ম, অভিলেখ, লিপিবিদ্যা, প্রাচ্যদর্শন, সাহিত্যতত্ত্ব, চিত্রকলা, বাংলার ধ্রুপদী ও আধুনিক সাহিত্যসম্ভার। মৌলিক রসসিক্ত লেখালেখি মূলত: ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে। গবেষণামূলক প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়ে চলেছে বিভিন্ন জার্নাল ও সম্পাদিত গ্রন্থে। সাম্প্রতিক অতীতে ডিজিটাল আর্ট প্রদর্শিত হয়েছে আর্ট গ্যালারিতে, বিদেশেও নির্বাচিত হয়েছেন অনলাইন চিত্রপ্রদর্শনীতে। ফেসবুক পেজ, ইন্সটাগ্রামের মাধ্যমে নিয়মিত দর্শকের কাছে পৌঁছে দেন নিজের চিত্রকলা। এখানে একসঙ্গে হাতে তুলে নিয়েছেন কলম ও তুলি। লিখছেন রম্যরচনা, অলংকরণ করছেন একইসঙ্গে।