বৃহস্পতিবার ১৪ নভেম্বর, ২০২৪


হীরক রাজার রাজকোষের সিন্দুকে রয়েছে হীরে। অজস্র, অসংখ্য। এর থেকে কিছু হরে বার করে আনতে হবে ঘুষ দেওয়ার জন্য। কারণ পেয়াদাদের ঘুষ না দিলে তারা কাজ করবে না। পাঠশালার উদয়ন পন্ডিত এই ফন্দি দিয়েছিলেন। অত্যাচারী রাজাকে শায়েস্তা করতে গুপী বাঘা হাত মিলিয়ে ছিল উদয়ন পন্ডিতের সঙ্গে।
গান গেয়ে যদিও গুপী বাঘা প্রহরীদের বশ করে ফেলেছিল, কিন্তু সিন্দুক খুলতে হবে যখন তখন তারা দেখে, সিন্দুকের তিনটে তালার চাবি আগলে বসে আছে বাঘ মামা। শেষে বাঘ মামাকে গুপী গান শোনায় “পায়ে পড়ি বাঘ মামা, করো নাকো রাগ মামা, তুমি যে এ ঘরে কে তা জানতো।”
আরও পড়ুন:

পর্দার আড়ালে, পর্ব-৩৪: মানিকদা আমি ‘এজে’ আপনার থেকে বড়, কিন্তু আপনি ‘ইমেজে’ আমার থেকে অনেক বড়: জহর

পঞ্চমে মেলোডি, পর্ব-১৬: ‘ও হানসিনি, মেরি হানসিনি কাঁহা উড় চলি’—কিশোর-পঞ্চম ম্যাজিক চলছেই

এই দৃশ্য গ্রহণের জন্য সত্যজিৎ রায় সদলবলে গেলেন মাদ্রাজে শুটিং করতে। একটি সার্কাসের বাঘের সন্ধান দিয়েছিলেন মাদ্রাজে থাকা এক বাঙালি। মাদ্রাজে পৌঁছে সত্যজিৎ রায় বাঘটিকে যখন দেখলেন তখন তাঁর মন ভেঙ্গে গেল। বাঘটার তিনকাল গিয়ে এককালে ঠেকেছে। তাকে নিয়ে কি করে শুটিং করা যাবে? নতুন বাঘের সন্ধান নেমে পড়লেন সবাই। এবার আরেকটি বাঘের সন্ধান পাওয়া গেল মাদ্রাজের আরেক ট্রেনারের বাড়িতে গিয়ে। নানান পশুর মধ্যে পছন্দসই বাঘ পাওয়া গেল। ট্রেনার এর নাম টাইগার গোবিন্দারাজন। তারা সস্ত্রীক বাঘের ট্রেনার। গোবিন্দরাজনের স্ত্রী এলেন শুটিং জোনে। শুটিংয়ের দিন সকাল দশটা নাগাদ চাকা লাগানো খাঁচায় করে বাঘ গেল শুটিং করতে।
আরও পড়ুন:

উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৩৯: পথের প্রান্তে রয়ে গিয়েছে সে হাজার তারার ‘লক্ষহীরা’

এগুলো কিন্তু ঠিক নয়, পর্ব-২৫: আমাদের নাকি রোজই চুল পড়ে!

রাজকোষের যে ঘর সে ঘরে আনা হল বাঘটাকে। আফিম জাতীয় কিছু খাইয়ে বাঘটাকে খানিকটা নিস্তেজ করে রাখা হয়েছিল। টুকরো টুকরো শট নেওয়া হল। ক্যামেরায় রয়েছেন সৌমেন্দু রায়। এবার রবি ঘোষের সঙ্গে সিন। বাঘা রুপী রবি ঘোষের বাঘের কাছাকাছি যেতে হবে চাবি আনতে। রবি ঘোষের অবস্থা তখন সহজেই অনুমেয়।
আরও পড়ুন:

ক্যাবলাদের ছোটবেলা, পর্ব-৪: এ শুধু অলস মায়া?

পঞ্চতন্ত্র: রাজনীতি-কূটনীতি, পর্ব-১০: রাজার আশপাশে থাকা দুষ্ট লোকেদের অতিক্রম করে তাঁর কাছ পর্যন্ত পৌঁছনোর পথ খুবই দুর্গম

ট্রেনার বললেন শিল্পীকে ‘উমা উমা ‘বলে যেতে হবে বাঘটার কাছে। বাঘ তাহলে ভাববে যে কোন চেনা লোক আসছে। আর তাহলে কোনও গন্ডগোল হবে না। মোটের উপর গানের সঙ্গে বাঘকে নিয়ে দৃশ্য দারুণ ভাবে গৃহীত হল মাদ্রাজের স্টুডিওতে।
হীরক রাজার দেশে মুক্তি পেয়েছিল ১৯৮০ সালের ডিসেম্বরে। প্রধান ভূমিকা গুলিতে ছিলেন হীরক রাজার ভূমিকায় উৎপল দত্ত, উদয়ন পন্ডিতের চরিত্রে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, গুপীর চরিত্রে তপেন চট্টোপাধ্যায়, বাঘার চরিত্রে রবি ঘোষ। অত্যন্ত জনপ্রিয়তা পেয়েছিল ছবিটি।
* পর্দার আড়ালে (Behind the scenes) : ড. শঙ্কর ঘোষ (Shankar Ghosh) বিশিষ্ট অধ্যাপক ও অভিনেতা।

Skip to content