রবিবার ২৪ নভেম্বর, ২০২৪


ছবি: প্রতীকী।

গত ১০ কোটি বছরে স্তন্যগপায়ী প্রাণীরা পৃথিবীর প্রায় প্রতিটি পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিয়েছে। জুনোমিয়া প্রজেক্টের মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা বর্তমানে ২৪০টি প্রজাতির প্রাণীদের ডিএনএ সিকোয়েন্স তুলনা করে স্তন্যপায়ী জিনোমের বৈচিত্রের তালিকা তৈরি করেছেন। সেই তালিকায় আরডভার্ক এবং আফ্রিকান সাভানা হাতি থেকে হলুদ দাগ যুক্ত শিলা এবং জেবু পর্যন্ত প্রাণী রয়েছে। বিজ্ঞান গবেষণা পত্রিকা সায়েন্স-এর ২০২৩ এর এপ্রিল মাসের একটি বিশেষ সংখ্যায় জুনোমিয়া গবেষক দল দেখিয়েছেন যে, কীভাবে তুলনামূলক জিনোমিকস শুধুমাত্র নির্দিষ্ট প্রজাতির অসাধারণ কৃতিত্বের উপরই শুধু আলোকপাত করতে পারে না। বরং বিজ্ঞানীরা আমাদের জিনোমের যে অংশগুলি কার্যকরী, সেগুলো কীভাবে স্বাস্থ্য ও নানান রোগ-ব্যাধিকে প্রভাবিত করতে পারে তা আরও ভালোভাবে বুঝতে সাহায্য করেছেন।
 

জুনোমিয়া প্রজেক্ট ঠিক কী

প্রায় দু’ দশক আগে ২০০০ সালে শুরু হয়েছিল মানুষ, ইদুর ও বাঁদরের জিনগত কাঠামোর জেনেটিক ইনস্ট্রাকশন বা জিনোম বিশ্লেষণের প্রকাণ্ড কাজ। এই কাজে ধারাবাহিকভাবে গত ২৩ বছর ধরে ২৪০টি স্তন্যপায়ী প্রাণীর জিনোম সিকুয়েন্স বিশ্লেষণ করা চলছে। সম্প্রতি সেই বিশ্লেষণের ফলাফল হাতে এসেছে, যা বিভিন্ন বিশ্ববন্দিত বিজ্ঞান পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। এই বিশ্বব্যাপী বৃহৎ গবেষণা প্রকল্পটির নাম রাখা হয়েছে জুনোমিয়ামিয়া। এই গবেষণার সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত রয়েছে ৩০টি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের প্রায় ১৫০ জন বিশিষ্ট বিজ্ঞানী। এই প্রজেক্টের নেতৃত্ব দিচ্ছেন প্রফেসর এলিনর কার্লসন, যিনি এমআইটি এবং হার্ভার্ডের ব্রড ইনস্টিটিউটের অধিকর্তা এবং ইউমাস চেন মেডিকেল স্কুলের বায়োইনফরমেটিক্স, ইন্টিগ্রেতিভ বায়োলজির অধ্যাপক ও প্রফেসর কারস্টিন লিনব্লাড টোহ যিনি ব্রড ইনস্টিটিউটের ভার্টিব্রেট (মেরুদণ্ডী) জিনোমিকস সুইডেনের উপসালা বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনামূলক জিনোমিকস-এর অধ্যাপক।

আরও পড়ুন:

প্রসঙ্গ স্বাস্থ্য বিজ্ঞান: মানুষ কি মৃত্যুর পরেও জীবনের ছবি দেখতে পায়? অদ্ভুত চমকপ্রদ তথ্য ধরা পড়ল ইইজি রেকর্ডিংয়ে

ভৌতিক উপন্যাস: মিস মোহিনীর মায়া, পর্ব-৪: পুতুলের মাথায় কোঁচকানো সোনালি চুল, চোখ দুটো কেমন যেন অদ্ভুত, কিন্তু এটা আমায় কে পাঠালো?

মানুষ-সহ বিভিন্ন স্তন্যপায়ী প্রাণীর ক্রম বিবর্তনের ধারা সম্পর্কে এই গবেষণা থেকে সঠিকভাবে জানা গিয়েছে। দেখা গিয়েছে কীভাবে এই বৃহৎ প্রাণীকুল কয়েকশো কোটি বছর ধরে বিবর্তিত হয়ে আসছে। প্রজাতিগত বিন্যাস বা ফাইলোজেনেটিক্স-এর মাধ্যমে এই গবেষণায় দেখানো হয়েছে বিভিন্ন প্রাণী কত লক্ষ কোটি বছর পরে কোন প্রাণীতে বিবর্তিত হয়েছে।
আরও পড়ুন:

এগুলো কিন্তু ঠিক নয়, পর্ব-২১: ক্যানসার মানেই মৃত্যু?

স্বাদে-আহ্লাদে: ‘এগ পকেট’ পছন্দ? তা হলে বাড়িতেই বানান সহজ এই রেসিপি

 

গবেষণায় প্রাপ্ত নতুন তথ্য

কিছুদিন আগে এই জুনোমিয়া প্রজেক্টের গবেষকরা জিনোমের বিভিন্ন জায়গাগুলিকে চিহ্নিত করেছেন। কখনও কখনও ডিএনএ-র একক অক্ষর যেগুলি স্তন্যপায়ী প্রজাতি এবং লক্ষ লক্ষ বছরের বিবর্তন জুড়ে সর্বাধিক সংরক্ষিত বা অপরিবর্তিত থেকেছে সেইসব অঞ্চলগুলি চিহ্নিত করেছেন। যেগুলি জৈবিকভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিজ্ঞানীরা স্তন্যপায়ী প্রাণীর ক্ষেত্রে বিশেষ বৈশিষ্ট্যগুলির জন্য জেনেটিক ভিত্তির অংশও খুঁজে পেয়েছেন। যেমন হাইবারনেট বা শীতঘুমে যাওয়ার ক্ষমতা বা বহু দূর থেকে গন্ধ শুঁকে নেওয়া বা ঘ্রাণশক্তি, এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যাওয়া বা মাইগ্রেশন করা এবং গতিবেগ—সব কিছুরই সুলুক সন্ধান এই গবেষণার ফলে মিলতে পারে।

আরও পড়ুন:

বৈষম্যের বিরোধ-জবানি, পর্ব-২১: ষষ্ঠী ষাট ষাট ষাট ও সমৃদ্ধি কামনা

পঞ্চমে মেলোডি, পর্ব-১২: হঠাৎ স্নানঘর থেকে পঞ্চমের চিৎকার ‘মিল গয়া মিল গয়া’, সৃষ্টি হল সেই জনপ্রিয় গান ‘মুসাফির হুঁ ইয়ারো’

এই প্রজেক্টের মাধ্যমে গবেষকরা এমন প্রজাতিগুলি চিহ্নিত করেছেন যেগুলি বিলুপ্তির জন্য বিশেষভাবে সংবেদনশীল এবং জেনেটিক বৈচিত্রগুলি যা বিরল ও সাধারণ মানুষের বিভিন্ন রোগ নির্ণয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করার সম্ভাবনা রাখে। এই গবেষণার জন্য সান দিয়েগো ওয়াইল্ডলাইফ অ্যালায়েন্স-সহ বিশ্বব্যাপী প্রায় ৫০টিরও বেশি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের থেকে ডিএনএ-র নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। এর মধ্যে বেশ কিছু বিপন্ন প্রজাতির জিনোমও আছে। এই সমস্ত জিনোম বিশ্লেষণ করেই এই বিভিন্ন ফলাফলগুলি পাওয়া যাচ্ছে, যা ভবিষ্যতে মানুষ-সহ বিভিন্ন স্তন্যপায়ী প্রাণীর জিনোম গবেষণায় নতুন দিশা দেখাবে।

অধ্যাপক কার্লসনের কথায়, জিনোমিকসের সবচেয়ে বড় সমস্যাগুলির মধ্যে একটি হল মানুষের জিনোম অনেক বড় এবং তার অনেক কিছুই এখনও পর্যন্ত জানা যায়নি। জুনোমিয়া প্রজেক্টের এই বিভিন্ন গবেষণালব্ধ ফলাফল থেকে আমরা অন্যান্য স্তন্যপায়ী প্রাণীর জিনোম বিশ্লেষণ করে অনেক তথ্য জানতে পেরেছি, যা বতর্মানে মানুষের জিনোম গবেষণায় অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেতে সাহায্য করছে।
* প্রসঙ্গ স্বাস্থ্য বিজ্ঞান (health-science): ড. দোলন দাস, (Dolan Das) শারীরবিদ্যার অধ্যাপিকা, কল্যাণী মহাবিদ্যালয়।

Skip to content