শনিবার ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২৪


অঙ্কের ক্লাসে মগ্ন শ্রবণ। ছবি: সংগৃহীত।

অঙ্কই তাঁর সারাক্ষণের সঙ্গী, তাঁর ধ্যানজ্ঞান। সেই ‘ধ্যানজ্ঞানের’ নেশায় বহুজাতিক সংস্থার মোটা বেতনের চাকরি ছাড়তেও বিন্দুমাত্র দ্বিধা করেননি শ্রবণ।এক আইআইটি স্নাতক। ঘনিষ্ঠ থেকে পরিচিত মহলে তিনি ‘ম্যান জিনিয়াস’ নামেই খ্যাত। রাহুল রাজ নামে এক টুইটার গ্রাহক শ্রবণের সেই প্রতিভা আর অঙ্কের প্রতি তাঁর নেশাকে সমাজমাধ্যমে প্রকাশ্যে এনেছেন। “তিনি জেইই-তে যোগ্যতা অর্জন করেন এবং আইআইটি গুয়াহাটিতে যোগদান করেন। তিনি আন্তর্জাতিক সংস্থার চাকরি ছেড়ে দেন এবং অধ্যয়ন এবং গণিত শেখানোর উপায় খুঁজতে থাকেন, “রাহুল রাজ শ্রবণের ইউটিউব টিউটোরিয়াল থেকে একটি স্ক্রিনশট নিয়ে শেয়ার করেছেন।”
করোনা আবহে স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে পড়াশুনা প্রায় অনলাইন মাধ্যমেই হয়েছিল। আট থেকে আশি আমরা প্রায় সকলেই কমবেশি এই মাধ্যমে নিজেদের মানিয়ে নিতে শিখেও গিয়েছিলাম। করোনা চলে গেলেও তার আভাস রয়ে যাবার মতন এখন অনেকেই শিক্ষামূলক নানা পরামর্শ, নানা বিষয় পড়ানো ইত্যাদির জন্য ইউটিউবকে মাধ্যম হিসাবে ব্যবহার করছেন। শ্রবণও চাকরি ছাড়ার পর নিজের একটি ইউটিউব চ্যানেল খুলেছেন। সেখানেই নিয়মিত অঙ্ক নিয়ে নানা পরামর্শ দিয়ে থাকেন। এক জন আইআইটি স্নাতক শুধু অঙ্ক পড়ানোর নেশায় মোটা বেতনের চাকরি ছেড়েছেন, বাস্তবে এমন ঘটনা খুব কমই শোনা যায়।
আরও পড়ুন:

অজানার সন্ধানে: মিথ্যার সঙ্গে আপোষ না করে ছাড়েন চাকরি, দিন কাটে অনাহারে, কে এই ভারতের ফেভিকল ম্যান?

দশভুজা: জীবনে যা কিছু করেছি, প্রত্যয়ের সঙ্গে করেছি: কানন দেবী/২

চেনা দেশ অচেনা পথ, পর্ব-২০: রায়পুর থেকে রাজিম

এগুলো কিন্তু ঠিক নয়, পর্ব-২০: শোওয়ার বালিশ বিছানা কেমন হবে? শক্ত না নরম?

রাহুল জানিয়েছেন, তাঁর বন্ধু শ্রবণ আইআইটি গুয়াহাটি থেকে স্নাতক করেছেন। তাঁর ভালো রেজাল্টের জন্য অতি সহজেই ভালো বেতনের চাকরিও পেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু চাকরিতে তিনি একেবারেই মনোনিবেশ করতে পারছিলেন না। বরং অঙ্ক শেখানোই আগ্রহ চেপে বসে বেশি করে। আসলে তিনি ছিলেন প্রকৃত সাধক আর তাঁর সাধনা ছিল শুধুই অঙ্ক শেখানো। তাই এক লহমায় মোটা বেতনের চাকরি ছাড়তেও কুণ্ঠিত হন নি শ্রবণ। তিনি শ্রবণকে “গণিত প্রতিভা” বলেছেন।
আরও পড়ুন:

স্বাদে-আহ্লাদে: তপ্ত দিনে প্রাণ জুড়োতে বন্ধুদের জন্য বানিয়ে ফেলুন আমপান্না

উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৩৫: যে ছিল আমার ‘ব্রতচারিণী’

পঞ্চমে মেলোডি, পর্ব-১১: ‘কটি পতঙ্গ’ ছবিতে পঞ্চমের সুরে কিশোর নিজেকে উজাড় করে দেন

রাহুলের দাবি, বিভিন্ন কোচিং সেন্টারগুলিতে যে ধরনের অঙ্ক শেখানো হয়, শ্রবণ তার ইউটিউব চ্যানেলে একেবারে ব্যতিক্রমী পদ্ধতিতে অঙ্ক শেখান। তাঁর কথায়, “যে কোনও আইআইটিতে চাকরি পাওয়ার যোগ্যতা সম্পূর্ণ মাত্রায় রয়েছে শ্রবণের। প্রচুর অর্থ উপার্জনেরও সুযোগ রয়েছে তাঁর। কিন্তু সে সবের প্রতি বিন্দুমাত্র দৃষ্টিপাত করেন না শ্রবণ।” রাহুলের কথায়—”তিনি ঋষিদের মতো, পথিকের মতো, যাযাবরের মতো, পাগলের মতো জীবনযাপন করেন।”

শ্রবণের এই নেশার কথা প্রকাশ্যে আসতেই নেট মাধ্যমে অনেকে তাঁকে কুর্নিশ জানিয়েছেন। তাঁর করা টুইটে এক মিলিয়নেরও বেশি ভিউ এবং ১৮ হাজার লাইক পেয়েছে। এক জন বলেছেন, “শুধু পড়ানোর নেশায় মোটা বেতনের চাকরি ছেড়ে দেওয়ার মতো ঘটনা সাম্প্রতিককালে বিরল। তাঁকে কুর্নিশ।” অন্য একজনের মন্তব্য, “তিনি যদি গবেষণা করতে চান তবে তাঁকে বিশ্বের কয়েকটি প্রধান প্রতিষ্ঠানে যেতে হবে। তারা বিশুদ্ধ বিজ্ঞানে গবেষণা এবং পরীক্ষার জন্য একটি অনুকূল পরিবেশ প্রদান করে। ভারত ফলিত বিজ্ঞানের জন্য বেশি উপযোগী।”

আরও পড়ুন:

রহস্য উপন্যাস: পিশাচ পাহাড়ের আতঙ্ক, পর্ব-১৫: আর্য কোথায়?

গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৬৩: গগনেন্দ্রনাথের‌ ঘুড়ি ওড়ানো

পঞ্চতন্ত্র: রাজনীতি-কূটনীতি, পর্ব-৫: অল্প ক্ষতি স্বীকার করে হলেও ভবিষ্যতে বড় লাভের কথা চিন্তা করা দরকার

গণিতবিদ এবং দাবা খেলোয়াড় শ্রীনিবাস রাঘব বলেন—“তাঁর সম্পর্কে জানতে পেরে অবাক লাগছে। তিনি আমার মতো আরও অনেকের কাছে উদাহরণ হিসেবে কাজ করেছেন,”। আরও একজন লিখেছেন, “শ্রবণের আশ্চর্যজনক কাজ… সাহস, গর্ব এবং সংকল্প একটি অনুপ্রেরণামূলক গল্প।”

একজন তাঁর প্রশংসা করে মন্তব্য করেছেন, “তুমি একজন সত্যিকারের গুরু। তোমার জন্য আমরা গর্বিত.” আরও এক জন বলেছেন, “এঁরাই আসল গুরু। সত্যিই দৃষ্টান্তমূলক উজ্জ্বল এক চরিত্রের নাম শ্রবণ।”
* অজানার সন্ধানে (Unknown story): ড. সঞ্চিতা কুণ্ডু (Sanchita Kundu) সংস্কৃতের অধ্যাপিকা, হুগলি মহসিন কলেজ।

Skip to content