সোমবার ২৫ নভেম্বর, ২০২৪


ছবি: প্রতীকী। সংগৃহীত।

সীতাকে নিষ্কলুষ প্রমাণ করার জন্য অগ্নিপরীক্ষা দিতে বলা হয়েছিল। এই গল্প আমরা শিশুকাল থেকে পড়ে কিংবা শুনে আসছি। সেই সঙ্গে কুঁজি মন্থরার কথাও পড়েছি, যিনি কৈকেয়ীকে বুদ্ধি দিয়েছিলেন রামকে বনবাসে পাঠানোর জন্য। এর জন্য কুঁজি মন্থরার বিশাল কিছু দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হয়েছিল বলে খুব জোরাল লেখনি দেখি না। এবার তাহলে প্রশ্ন করা যাক যে, কেন আমরা সীতাকে নিয়ে বেশি চিন্তিত হলাম। কিন্তু যার মন্ত্রণার জোরে বনবাসে যেতে হয় তাঁকে কিছুই বললাম না। পিতৃতান্ত্রিক সমাজে কোন কাজকে অপরাধ বা নৈতিক অধঃপতন হিসেবে দেখবো আর কোন কাজটিকে নয়— সে ব্যাপারে বড়সড় বিবাদ আছে। আজকে সেই বিবাদ কিছুটা হলেও বোঝার চেষ্টা করা যেতে পারে।

পিতৃতান্ত্রিক সমাজের এই বিবাদের মূল কারণ এক কথায় বললে বলতে হয় ক্ষমতার কেন্দ্রে থেকে যাওয়ার উদগ্র আকাঙ্খা থেকেই এমন সব দুর্নীতির কাঠামো নির্মাণ করা হয়েছে। এখানে দুর্নীতি বিষয়টিকে আমি একটা বিস্তারিত প্রেক্ষাপটে আনতে চেয়েছি। কারণ, খুব স্পষ্ট। আমি ‘লিঙ্গ বৈষম্যের বিরোধ জবানি’ বিষয় নিয়ে নিয়মিত লিখছি। বিরোধ জবানির মধ্যে কোনও ভাবেই পিতৃতান্ত্রিক সমাজের করে দেওয়া নির্মাণকে পুরপুরি গ্রহণ করতে পারি না। সেই কাঠামোকে প্রশ্ন যেমন করতে হবে, তেমন ভাবে আবার কাঠামোকে পুনর্গঠনের চেষ্টাও চালিয়ে যেতে হবে। সেই কারণে আমি এখানে দুর্নীতির কাঠামো মানে বলতে চাইছি, কীভাবে নারীর উপর যৌন নিপীড়ন চালিয়েও সমাজে সেই নিপীড়নের দায় নারীদের উপর চাপিয়ে দেওয়া হয়। আবার নারীরা কোনও অপরাধের অভিযোগ করতে চাইলে প্রশাসন এবং আইনের সাহায্য চাইতে গেলে প্রথমে সেই নারীকেই দাগিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। সেই সঙ্গে নারীর ক্ষতি করা অপরাধীর প্রতি প্রশাসন এবং আইনের প্রাথমিক পদক্ষেপ চাইলে অপরাধীর অপরাধকে কম গুরুত্বপূর্ণ অপরাধ হিসেবে দেখাতে চাওয়া হয়।

পাশাপাশি নারী কোনও গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক পদে থাকলে সেই নারীর দরকারি বা কাজের প্রয়োজনের খাতিরে দেওয়া আদেশ মানতে না চাওয়া। তাঁকে অকারণ হেনস্থা করে বিনোদন পাওয়ার চেষ্টা করা। সেই নারীর শারীরিক গঠন নিয়ে নানা রকম অশালীন মন্ত্যব্য করা, কথায় কথায় অশালীন গালিগালাজ করে ধর্ষণ করার মতো বিষয়কে তুলে এনে অপমান করা হায়। অকারণে নারী সহকর্মীদের গায়ে হাত দেওয়া, চাকরিতে বরখাস্ত কিংবা পদন্নতি আটকে দেওয়ার নাম করে আবার নারী সহকর্মীদের কাজের প্রতি দায়বদ্ধতার গুণাবলিকে কাজে লাগিয়ে তাঁদের দিয়ে খাটিয়ে নিয়ে সেই কাজের কৃতিত্ব নিজে নিয়ে নেওয়া— এ করকমের দুর্নীতির কথা বলতে চাইছি। আমাদের সমাজ এই দুর্নীতিকে লিঙ্গ বৈষম্যের দৃষ্টিতে দেখতে চায় না।
এই বক্তব্যের পালটা হিসেবে অনেকেই বলবেন মহিলারা অপরাধ করেন না ?বা তারা ৪৯৮ ধারার অপব্যাবহার করেননি? অথবা মহিলারা পুরুষদের বাধ্য করেননি নিজেদের মাত্রাতিরিক্ত দাবি মেটানোর জন্য ক্রমশ ঘুষখোর হয়ে উঠতে কিংবা নারীদের পুরুষদের অপরাধ প্রবণ করে তোলার কথা খুব জোর দিয়ে বলে থাকেন একদল মানুষ। বহু নারীকে অন্য নারীদের নানা ভাবে অপরাধী হিসেবেও চিহ্নিত করতে দেখা যায়। এই চিহ্নিতকরণ প্রক্রিয়াতে অনেক সময় এক বা একাধিক নারী পরস্পরের সঙ্গে উচ্চ গ্রামের শব্দ প্রয়োগ বা ঝগড়া কিংবা মারামারিতেও লিপ্ত হতে দেখা যায়। পিতৃতান্ত্রিক সমাজে এই বিষয়গুলি নিয়ে ঠাট্টা মস্করা করতে দেখা যায়, আর বলা হয় এরা নিজেদের মধ্যে চুলোচুলি করতে ব্যাস্ত আছে। এই নারীরা নিজেরাই নিজেদের শত্রু।

কেউ নিজেকে প্রশ্ন করেছেন, কেন একজন নারী আর একজন নারীকে শত্রু ভাববে? ব্যাতিক্রম অবশ্যই আছে। নারীরা দুর্নীতির কাঠামোর থেকে একেবারে বাইরে সে কথা কখনই বলা যায় না। কিন্তু যে সুক্ষ বিষয়টিকে আমাদের বুঝতে হবে সেটা হল পিতৃতান্ত্রিক সমাজের কোন দর্শনের মায়াতে যা অপরাধ নয় তা অপরাধে পরিণত হয়েছে এবং কীভাবে হয়েছে। এছাড়াও ওপরে বর্ণিত দুর্নীতির কাঠামোতে কোনও নারীদের বেশি অপরাধী সাব্যস্ত করছে সমাজ আর এই ভাবে দমন করার খেলাতে কারা মানে নারী না পুরুষ বেশি লাভবান হচ্ছে। উত্তরে আপনারা বলবেন পিতৃতান্ত্রিক সমাজ বেশী লাভবান হচ্ছে কিন্তু বাস্তবে দেখা যায় সুবিধে পাওয়ার ইচ্ছের কাছে আমাদের সাম্যের ন্যায়বোধ পরাস্ত হয়। প্রলুব্ধ মন এক সময় নারীবাদী হয়, আবার পরক্ষণেই তার বিরুদ্ধচারণ করাটাই দরকারি হয়ে পড়ে। অর্থাৎ আমরা যারা সুবিধেবাদী তারা দুর্নীতির কাঠামোতেই আশ্রয় খুঁজি। এই ক্ষেত্রে মানে দুর্নীতির এই এখনও অবধি চিহ্নিত না হওয়া দুর্নীতির কাঠামোর প্রতি রাষ্ট্রের ভূমিকাকে আমরা কীভাবে দেখব? কারণ বহু রাজনৈতিক রং লাগা ধর্ষণের ঘটনাতে রাষ্ট্রকে বলতে শোনা যায়, এই ঘটনার পিছনে মেয়েটি দায়ী, নয়তো রাজনীতি করা বাবা কিংবা স্বামী দায়ী। কিন্তু রাষ্ট্রের রক্ষা করার অঙ্গিকার থেকে বিচ্যুত হওয়াকে দুর্নীতির কাঠামোর মধ্যে রাখার কথা আমরা কোনওভাবেই আলোচনাতে রাখব না।
আরও পড়ুন:

বৈষম্যের বিরোধ-জবানি, পর্ব-১৯: উন্নয়নের কাণ্ডারী নির্ণয়ে পিতৃতান্ত্রিক পক্ষপাতিত্ব

ভৌতিক উপন্যাস: মিস মোহিনীর মায়া, পর্ব-২: কপালে জমেছে ঘাম, শুকিয়ে গিয়েছে জিভ, পেছন থেকে ভেসে আসছে গা ছমছমে শব্দ

মহাকাব্যের কথকতা, পর্ব-১১: করুপাণ্ডবদের অস্ত্রগুরু কৃপাচার্য, দ্রোণাচার্য এবং কয়েকটি প্রশ্ন

গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৬৩: গগনেন্দ্রনাথের‌ ঘুড়ি ওড়ানো

এই দুর্নীতির কাঠামোর আর একটা পিঠ আছে, নারী-পুরুষ উভয়ের দুর্নীতির প্রতি মনোভাব বা মনস্তাত্বিক দৃষ্টিকোণ। এই দুর্নীতি বিষয়টি পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে—কাজ পাওয়ার জন্য ঘুষ দেওয়া বা নেওয়ার বিষয়, পাওনা নিয়ে বচসার, হত্যা করা, চুরি করা, সরকারি টাকা কিংবা অন্যের টাকা নয়ছয়, গয়না চুরি বা নিষিদ্ধ ড্রাগের নেশা করার মতো বিষয়গুলি উঠে আসবে। রাষ্ট্রসঙ্ঘের অপরাধ এবং লিঙ্গ বিষয়ক সহায়ক গ্রন্থ পড়লে জানা যায়, নারী এবং পুরুষ উভয়েই ঘুষ নিতে খুব বেশি পিছপা হয় না। কিন্তু তুলনায় পুরুষ অনেক বেশি ঘুষ দিয়ে থাকে। কিন্তু খুব তাৎপর্যের বিষয় হল নারীরা পরিস্থিতিতে পড়ে ঘুষ নিলেও তারা পারতপক্ষে ঘুষ বিষয়টিকে সমর্থন করে কিংবা ঘুষের প্রতিদান দেওয়ার জন্য উদগ্রীব হয়। লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট কাটার বদলে অন্যায় ভাবে লাইন ভেঙে টিকিট কাটার চেষ্টা করতে দেখা যায়। ট্রেন এ টি টি কে ঘুষ দিয়ে যাতায়াত করতে দেখা যায়। এরকম ভুরি ভুরি উদাহরণ আছে। খুব সহজ করে বললে নারীরা ঘুষ বিষয়টিকে তখনই সমর্থন করে, যখন তাঁদের পিঠ দেওয়ালে ঠেকে যায়। পুরুষের ক্ষেত্রে ঠিক উল্টোটাই করতে দেখা যায়। তাদের দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে চেনা নারীদের ব্যবহার করতে শুরু করে দেয়।

রাষ্ট্রসঙ্ঘের অপরাধ এবং লিঙ্গ বিষয়ক সহায়ক গ্রন্থে আরও উল্লেখ করা হয়েছে যে, পুরুষদের দেওয়া ঘুষের মূল্য একজন নারীর দেওয়া ঘুষের মূল্যের থেকে বহুগুণ বেশি। অর্থাৎ সমাজে নারীর যে কোন মূল্য নেই সেটা দুর্নীতির কাঠামোতেও পরিষ্কার করে বলা আছে। বিভিন্ন সমাজ বিজ্ঞানের সমীক্ষার ফলাফলে আরও উঠে এসেছে যে, নারী এবং পুরুষ উভয় পুরুষকে বেশি ঘুষ দিয়ে থাকে কিন্তু একজন নারীকে তা দেওয়া হয় না।
আরও পড়ুন:

উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৩৫: যে ছিল আমার ‘ব্রতচারিণী’

পঞ্চমে মেলোডি, পর্ব-১১: ‘কটি পতঙ্গ’ ছবিতে পঞ্চমের সুরে কিশোর নিজেকে উজাড় করে দেন

চেনা দেশ অচেনা পথ, পর্ব-১৯: কুরদার ইকো রিসর্ট—অনাবিস্কৃত এক মুক্তা

কেন এই প্রবণতা? সমাজবিজ্ঞানীদের ব্যাখ্যা হল — পুরুষ এবং নারীর মধ্যে পুরুষ ঝুঁকি নিতে পছন্দ করে। নারীরা ঝুঁকি এড়িয়ে চলতে চায়। নারীরা সামাজিক বিষয়গুলিকে খুব গুরুত্ব দিয়ে দেখে। তাঁরা সংবেদনশীল। পরস্পরের সঙ্গে অতিরিক্ত বা খুব প্রয়োজন না হলে প্রতিযোগিতায় নামতে চায় না। যদি তাঁদের শাড়ি, গয়না নিয়ে বায়নাকে প্রতিযোগিতার সঙ্গে তুলনা করেন তাহলে সেটা খুব ছেলেমানুষি হবে। কারণ পিতৃতান্ত্রিক সমাজ নারীদের কোনো অধিকার দিতে চায় না, উল্টে নারীদের সবসময় ঘরের চার দেওয়ালের মধ্যে আটকে রাখতে চায় পরিবারের প্রতি দায়িত্ব পালনের অজুহাত দিয়ে। কিন্তু নারী যদি বিদ্রোহ করে। সন্তান উৎপাদন করতে, ঘরের কাজ করতে অস্বীকার করে? তাই নারীকে বশে রাখার জন্য সম্পদ কিছু দিয়ে বলা জে তোমাকে আমি রানীর মত রাখতে চাই। কিন্ত মিথ্যে প্রতিশ্রুতি ধরা পড়লে চলবে না। তাই নারীদের পরাধীনতার বেড়া দিয়ে রাখতে গেলে কিছু বিষয় নিয়ে লড়িয়ে দিতে হবে। তাই সেই মিথ্যে প্রতিযোগিতাতে আটকে রাখা হয়। অথচ দেখা গিয়েছে নারীরা সবাইকে নিয়ে চলতে বেশি পছন্দ করেন। অনেকেই বলবেন কোথায়? তারা তো শাশুড়ির সঙ্গে থাকতে চায় না। আলাদা থাকতে পছন্দ করে। সেই প্রসঙ্গ আলাদা এবং পরে সেই নিয়ে আলোচনা করা যাবে।

কিছুদিন আগেই দুটি ঘটনার কথা সংবাদপত্রে পড়লাম। একটি সংবাদে বলা হয়েছে, শাশুড়ির আগুনে পুড়ে মৃত্যুর কারণ হিসেবে বউমা এবং তাঁর পরিবারকে দায়ী করা হয়। তারপর ছয় বছর সংশধনাগারে থেকে প্রমাণ করতে হয় যে তাঁরা এই অপরাধ করেনি। অন্য দিকে, সিসি ক্যামেরাতে বউমাকে দেখা গিয়েছে, সে হাতে রান্নার প্যান নিয়ে ঘরে ঢুকছেন শাশুড়িকে হত্যার জন্য। এই অপরাধের কারণ কী? এই হত্যা করার ইচ্ছে বা চেষ্টা করার কোনও সোজাসাপ্টা উত্তর দেওয়া যায় না। উত্তর কিছু ঠাওর করতে গেলে জানতে হবে, সমাজে এদের নিজেদের যা ভূমিকা ধরুন শাশুড়ি, বউমা ইত্যাদি কারণ সমাজে সামাজিক সম্পর্ক তৈরির সঙ্গে সঙ্গে সামাজিক ভূমিকা যেমন বাবা, মা ইত্যাদি নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়।
আরও পড়ুন:

স্বাদে-গন্ধে: সামনেই জন্মদিন? বিশেষ দিনের ভূরিভোজে বানিয়ে ফেলুন কাশ্মীরি পদ মটন রোগান জোস!

রহস্য উপন্যাস: পিশাচ পাহাড়ের আতঙ্ক, পর্ব-১৪: ভয়ংকর গর্ভ

ডায়েট ফটাফট: জেনে নিন নিয়মিত ব্রেকফাস্টে ওটস খাওয়ার ১০ উপকারিতা

দশভুজা: আমি বনফুল গো: তিনিই ছিলেন ভারতীয় ছবির প্রথম সিঙ্গিং সুপারস্টার/১

এই ভূমিকাগুলি তাঁরা কীভাবে মানে প্রতিটি পরিবারের সন্তান মানুষ করার পদ্ধতি আলাদা হয় আর কোন ভূমিকা সমাজ থেকে শিখেছে। কারণ তাঁরা যদি এটাই শেখে যে একজন আর একজনের উপর সারাজীবন দমনমূলক আচরণ করে যাবে যা পিতৃতান্ত্রিক দর্শন শেখায় আর সমাজ কিছুই বলবে না, শাস্তিও হবে না তখন তা অপরাধমূলক আচরণের দিকে এগিয়ে যায়। পরস্পরের প্রতি বিশ্বাস তখন হারিয়ে যায়। যাঁর উপর দমনমূলক আচরণ হচ্ছে তিনি জানেন, ধরা পড়লে সমাজ এবং আইন দৌড়ে এসে শাস্তি দেবে। এক্ষেত্রে বৌমা হয়তো শাশুড়ির অত্যাচারে পর্যদুস্থ কিন্তু শাশুড়ির প্রতি কোনো পদক্ষেপ নিলেই বলা হবে গুরুজন দের অবজ্ঞা করা হচ্ছে। তখন নিজেই তিনি প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে উঠতে থাকে কিছু করতে বা বলতে না পেরে। কিছু ক্ষেত্রে দেখা গেছে সে কিছুটা সমর্থন পেলে অন্য নারীদের থেকে বা কোনও পুরুষের থেকে কিছু একটা অপরাধমূলক ঘটনা ঘটিয়ে দিতে পারে।কারণ তার সহ্যের সীমানা পার হয়ে গেছে।

রাষ্ট্রসঙ্ঘের অপরাধ এবং লিঙ্গ বিষয়ক সহায়ক গ্রন্থে দেখা যাচ্ছে, পুরুষ অনেক বেশি অপরাধের নেটওয়ার্কের সঙ্গে সহজ ভাবে যুক্ত হয়ে যায়। সেই সঙ্গে নিজেদের মধ্যে অদ্ভুত একতা, বিশ্বাসযোগ্যতার বাঁধনে জড়িয়ে থাকে। কেউ কারও অপরাধের কথা কাউকে জানায় না। নিজেদের মধ্যেই লুকিয়ে রেখে দিতে পারে। সেখানে নারীর মধ্যে পিতৃতান্ত্রিক ক্ষমতার খেলা নারীদের মধ্যের বিশ্বাস কে টলিয়ে দিয়েছে এই বলে যে নারী যত বেশী পিতৃতান্ত্রিক ব্যবস্থা কে গ্রহণ করবে, পালন করবে ততই সে মহীয়সী/ সতী হিসেবে সমাজে মান্যতা পাবে। এই মনস্তাত্বিক প্রাপ্তির লোভে নারী আজ অনেক টাই বিপন্ন।

পরিশেষে বলতে চাই, নারী তখনই অপরাধ বা দুর্নীতির কাঠামোতে থাকতে চায় যখন তাঁকে সহজে ধরা যাবে না। তিনি সবার আড়ালে থেকে নিজের প্রয়োজনের বিষয়টি মিটিয়ে নিতে চাইবেন। কিন্তু যে মুহূর্তে তা ধরা পড়ে যাবে তখন তিনি নানা রকম উপায় খুঁজবে যেমন কাউকে দোষী সাব্যস্ত করা কিংবা দুর্বল কেউকে নারী ঘটিত কেসে ফাঁসিয়ে দেওয়া। আবার যেখানে সামাজিক নিয়ন্ত্রণ দুর্বল। সেখানে নারীরা চাইবেন এই সমস্যা থেকে নিজেকে আড়াল করে অন্তপুরে থেকে যেতে। কারণ, পিতৃতান্ত্রিক সমাজের রোষানলে সে পুড়ে যাবে। সীতার মতো অগ্নিপরীক্ষা দিয়ে যেতে হবে। কিন্তু দ্রৌপদীর ভীম হয়ে কেউ কিচক বধ করতে এগিয়ে আসবে না।—চলবে

* প্রবন্ধের বক্তব্য লেখকের নিজস্ব।
* বৈষম্যের বিরোধ-জবানি (Gender Discourse): নিবেদিতা বায়েন (Nibedita Bayen), অধ্যাপক, সমাজতত্ত্ব বিভাগ, পি আর ঠাকুর গভর্নমেন্ট কলেজ।

Skip to content