অলঙ্করণ: সৌমি দাসমণ্ডল।
সেদিনের প্রেমের স্বরলিপিটা আজও গোলাপে ফোঁটেনি। সময়টা ছিল নীল দিগন্তের হালকা উষ্ণ ছোঁয়ার মাঝে ফাল্গুনী পূর্ণিমায় রঙিন স্বপ্ন দেখার পালা। দুই নবীনের দীর্ঘ পথ চলার রঙিন সাক্ষী ছিল সেদিনের বালিগঞ্জ পাঠভবনের পাঁচ নম্বর বাসটা। মহুয়া বসেছিল বান্ধবীর পাশের সিটটায়। এর ঘণ্টা দুয়েক আগেই কমলাপাড়ের নীল শাড়ি, সাদা ফুলের গহনার সঙ্গে পলাশ রাঙ্গা আবিরের ছোঁয়ায় মহুয়া নীল দিগন্তের নাচের মাঝে মত্ত ছিল। হঠাৎই একাদশ শ্রেণির ছাত্র গোরাচাঁদের মন মাতল মহুয়ার মাদকতায়। তবে সমগ্র অনুষ্ঠানের শেষে শুরু হল প্রেমের প্রথম পাঠ। নানান রঙের খেলা সবেমাত্র শেষ করে যখন মহুয়া তার সহপাঠীদের সঙ্গে ওয়াশরুমে গিয়ে হাতমুখ ধুতে ব্যস্ত তখনই আয়নায় দেখল, পেছনে সেই ক্লাস ইলেভেনের গোরাদা সকলের অলক্ষ্যে দাঁড়িয়ে যেন তারই প্রতীক্ষায়।
পিছন ঘুরে এক ঝলক চোখে চোখ পড়তেই মহুয়া লজ্জায় লাল হয়ে উঠলো। তবে গোরার বুদ্ধিদীপ্ত চোখ দুটোর মধ্যে ছিল এক অদ্ভুত রকমের চাহিদা, যা ওই কিশোরীর যৌবনরসকে আরও উজ্জ্বল করে তুলেছিল সেদিন। মহুয়া খানিকটা এগিয়ে করিডরের দিকে আসতেই গোরাও তাকে অনুসরণ করল। একমুঠো পলাশ ফুল গোরা মহুয়ার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল আজ থেকে তুই শুধু আমার, সাক্ষী রইল এই পলাশ রাশি। শাড়ির আঁচল বাড়িয়ে ফুলের রাশি মহুয়া নিজের করে নিল।
বাবার চাকরি বদলির সুবাদে মহুয়া এ বছরই এখানে নতুন ভর্তি হয়েছে। তাই ছোট থেকে কোনওরকমেরই আলাপ পরিচয় ছিল না এই জুটির। লজ্জায় রক্তিম মহুয়া বাসে উঠে বসলো। বাসের হর্নের আওয়াজে একদল ছেলে হুড়মুড়িয়ে বাস ভর্তি করল। খানিকটা পথ যেতে না যেতেই সকলের মধ্যে শুরু হল পুনরায় রঙের মেলা। জামশেদপুরে থাকতে এর আগে, ও কখনও এভাবে রঙ নিয়ে খেলা দেখেনি। তাই মহুয়া নতুনকে স্বাগত জানিয়ে সমস্ত ঘটনার সাক্ষী রাখছিল তার ক্যামেরায়। হঠাৎই একমুঠো লাল আবির নিয়ে গোরা মহুয়ার সিঁথি রাঙিয়ে দিল। বাসের সকলের মধ্যে যে হুল্লোড় চলছিল তা মুহূর্তের মধ্যে যেন স্তব্ধ হয়ে গেল। সকলের দৃষ্টির কেন্দ্রবিন্দু তখন মহুয়া। হঠাৎই ক্লাস ফোরের এক ছোট্ট ছাত্র সজোরে বলে উঠলো—“এ… বা…বা, দাদাটা তো ওই দিদিকে বিয়ে করে নিল, এবার কি হবে?”
পিছন ঘুরে এক ঝলক চোখে চোখ পড়তেই মহুয়া লজ্জায় লাল হয়ে উঠলো। তবে গোরার বুদ্ধিদীপ্ত চোখ দুটোর মধ্যে ছিল এক অদ্ভুত রকমের চাহিদা, যা ওই কিশোরীর যৌবনরসকে আরও উজ্জ্বল করে তুলেছিল সেদিন। মহুয়া খানিকটা এগিয়ে করিডরের দিকে আসতেই গোরাও তাকে অনুসরণ করল। একমুঠো পলাশ ফুল গোরা মহুয়ার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল আজ থেকে তুই শুধু আমার, সাক্ষী রইল এই পলাশ রাশি। শাড়ির আঁচল বাড়িয়ে ফুলের রাশি মহুয়া নিজের করে নিল।
বাবার চাকরি বদলির সুবাদে মহুয়া এ বছরই এখানে নতুন ভর্তি হয়েছে। তাই ছোট থেকে কোনওরকমেরই আলাপ পরিচয় ছিল না এই জুটির। লজ্জায় রক্তিম মহুয়া বাসে উঠে বসলো। বাসের হর্নের আওয়াজে একদল ছেলে হুড়মুড়িয়ে বাস ভর্তি করল। খানিকটা পথ যেতে না যেতেই সকলের মধ্যে শুরু হল পুনরায় রঙের মেলা। জামশেদপুরে থাকতে এর আগে, ও কখনও এভাবে রঙ নিয়ে খেলা দেখেনি। তাই মহুয়া নতুনকে স্বাগত জানিয়ে সমস্ত ঘটনার সাক্ষী রাখছিল তার ক্যামেরায়। হঠাৎই একমুঠো লাল আবির নিয়ে গোরা মহুয়ার সিঁথি রাঙিয়ে দিল। বাসের সকলের মধ্যে যে হুল্লোড় চলছিল তা মুহূর্তের মধ্যে যেন স্তব্ধ হয়ে গেল। সকলের দৃষ্টির কেন্দ্রবিন্দু তখন মহুয়া। হঠাৎই ক্লাস ফোরের এক ছোট্ট ছাত্র সজোরে বলে উঠলো—“এ… বা…বা, দাদাটা তো ওই দিদিকে বিয়ে করে নিল, এবার কি হবে?”
তৎক্ষণাৎ কিংকর্তব্যবিমূঢ় মহুয়া ওর বান্ধবী কোলের মধ্যে লজ্জায় মুখ গুঁজে নিলো। বান্ধবী নিজের রুমালের সাহায্যে মহুয়ার সিঁথি অনেকটা হালকা করে দিয়ে, উদ্যত হল ঝগড়া করতে। পাত্র-পাত্রী কিন্তু তখন নীরবে চোখের ভাষায় গভীর প্রেমের সুরে মগ্ন। হায়ার সেকেন্ডারির ছেলেদের সঙ্গে সেকেন্ডারির মেয়েদের বাক-বিতণ্ডা যখন তুঙ্গে তখন মহুয়া একটু জোর গলাতেই বলে উঠলো— “তোরা সবাই এবার একটু থাম প্লিজ। আমার কিছু ভালো লাগছে না। আমাদের ব্যাপারটা আমাদেরই মিটিয়ে নিতে দে, তোরা সবাই।” কথাগুলো যেন এক পলকে বাসের সকলকে গুটিয়ে দিল। খানিকটা পরেই মহুয়া নেমে পড়ল। গোরার চোখ দুটো যেন মহুয়ার উত্তরের অপেক্ষায় ওর দিকেই চেয়ে রইল। তারপর বছরখানেক একই রুটের যাত্রী হয়ে, প্রেয়ারের আগে, ক্যান্টিনে বা কোনও অফ থাকা ক্লাসের ফাঁকে কিছুটা সময় বিনিময় করত দুজনে অথবা কখনও কখনও রাতে স্বপ্নের গভীরতায় মিলেমিশে থাকত নিজেদের অন্তরঙ্গ মুহূর্তে।
তবে সেই সুখকর মুহূর্ত যেন বেশি দিন স্থায়ী হয়নি। বায়োকেমিস্ট্রির ছাত্র হিসাবে গোরার নতুন ঠিকানা হল বেঙ্গালুরু। নিজেদের শেষ ঘনিষ্ঠ মুহূর্তের দিনটি ছিল পঁচিশে বৈশাখের দিন অর্থাৎ গুরুদেবের জন্মদিনের দিন, রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের জোড়াসাঁকো প্রাঙ্গণে আয়োজিত কবি প্রণাম অনুষ্ঠানের দিন।
মহুয়া তখন রবীন্দ্রভারতীর কলা বিভাগের ছাত্রী আর গোরা সবেমাত্র যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেছে। বর্তমানে গোরার পোস্ট ডক্টরাল কাজকর্মের জন্য বিদেশে যাওয়ার কথাবার্তা চলছে। মহুয়ার অনুরোধে গোরা সেদিন উপস্থিত হয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে। অনুষ্ঠানের সময়সূচি ছিল ভোর ছটা থেকে দুপুর বারোটা। তবে বেলা এগারটা নাগাদ বাইক নিয়ে জোড়া শালিক বেরিয়ে পড়ল লং ড্রাইভে। কলকাতা ও হাওড়া জেলা পেরিয়ে এসে অপরাহ্ণে পৌঁছল হুগলির কোনও এক প্রত্যন্ত অঞ্চলের চায়ের দোকানে। তাদের চায়ের ভাঁড় শেষ হতেই বৈশাখের বজ্রবিদ্যুৎ-সহ ঝোড়ো হাওয়া, দাপটের সঙ্গে কোথা থেকে একরাশ কালো মেঘ ডেকে আনলো। দোকানদার তখন চটজলদি দোকানের কাঠের দরজাটায় তালা ঝুলিয়ে সাইকেল নিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হল। খানিক পরে শুরু হল স্নিগ্ধ জলধারা যা নিবারণ করলো তাপ, দূর করল শুষ্কতা আর ভরিয়ে দিল প্রাণের অপূর্ণতা। মনের ইচ্ছাশক্তি টেনে ছিড়ে ফেলল মস্তিষ্কের বানানো ঘেরাটোপকে। ঐশ্বরিক মিলন সাগরের মধুর মিলনে মত্ত হল দুজনে। গোরার সোনার খাঁচায় বন্দি মন যেন ডানা ঝাপটে পাড়ি দিয়েছে কোনও গোপনে তীরে আর মহুয়ার বন্ধ মনের জানালাগুলো যেন একটু একটু করে ফাঁক হতে শুরু করলো। খাঁচার অচিন পাখি আপন সুরে ইচ্ছে ডানা ঝাপটাতে শুরু করল। যেন গোরা ও মহুয়া দুজনেই মর্মে মর্মে উপলব্ধি করল রবি ঠাকুরের সেই গান “কতবার ভেবেছিনু আপনা ভুলিয়া, তোমার চরণে দিব হৃদয় খুলিয়া… গোপনে তোমারে সখা কত ভালোবাসি।” এটাই ছিল তাদের জীবনের একান্ত ব্যক্তিগত মুহূর্ত কারণ এরপর দুজনের ঠিকানা সম্পূর্ণ বদলে গেল।
তবে সেই সুখকর মুহূর্ত যেন বেশি দিন স্থায়ী হয়নি। বায়োকেমিস্ট্রির ছাত্র হিসাবে গোরার নতুন ঠিকানা হল বেঙ্গালুরু। নিজেদের শেষ ঘনিষ্ঠ মুহূর্তের দিনটি ছিল পঁচিশে বৈশাখের দিন অর্থাৎ গুরুদেবের জন্মদিনের দিন, রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের জোড়াসাঁকো প্রাঙ্গণে আয়োজিত কবি প্রণাম অনুষ্ঠানের দিন।
মহুয়া তখন রবীন্দ্রভারতীর কলা বিভাগের ছাত্রী আর গোরা সবেমাত্র যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেছে। বর্তমানে গোরার পোস্ট ডক্টরাল কাজকর্মের জন্য বিদেশে যাওয়ার কথাবার্তা চলছে। মহুয়ার অনুরোধে গোরা সেদিন উপস্থিত হয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে। অনুষ্ঠানের সময়সূচি ছিল ভোর ছটা থেকে দুপুর বারোটা। তবে বেলা এগারটা নাগাদ বাইক নিয়ে জোড়া শালিক বেরিয়ে পড়ল লং ড্রাইভে। কলকাতা ও হাওড়া জেলা পেরিয়ে এসে অপরাহ্ণে পৌঁছল হুগলির কোনও এক প্রত্যন্ত অঞ্চলের চায়ের দোকানে। তাদের চায়ের ভাঁড় শেষ হতেই বৈশাখের বজ্রবিদ্যুৎ-সহ ঝোড়ো হাওয়া, দাপটের সঙ্গে কোথা থেকে একরাশ কালো মেঘ ডেকে আনলো। দোকানদার তখন চটজলদি দোকানের কাঠের দরজাটায় তালা ঝুলিয়ে সাইকেল নিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হল। খানিক পরে শুরু হল স্নিগ্ধ জলধারা যা নিবারণ করলো তাপ, দূর করল শুষ্কতা আর ভরিয়ে দিল প্রাণের অপূর্ণতা। মনের ইচ্ছাশক্তি টেনে ছিড়ে ফেলল মস্তিষ্কের বানানো ঘেরাটোপকে। ঐশ্বরিক মিলন সাগরের মধুর মিলনে মত্ত হল দুজনে। গোরার সোনার খাঁচায় বন্দি মন যেন ডানা ঝাপটে পাড়ি দিয়েছে কোনও গোপনে তীরে আর মহুয়ার বন্ধ মনের জানালাগুলো যেন একটু একটু করে ফাঁক হতে শুরু করলো। খাঁচার অচিন পাখি আপন সুরে ইচ্ছে ডানা ঝাপটাতে শুরু করল। যেন গোরা ও মহুয়া দুজনেই মর্মে মর্মে উপলব্ধি করল রবি ঠাকুরের সেই গান “কতবার ভেবেছিনু আপনা ভুলিয়া, তোমার চরণে দিব হৃদয় খুলিয়া… গোপনে তোমারে সখা কত ভালোবাসি।” এটাই ছিল তাদের জীবনের একান্ত ব্যক্তিগত মুহূর্ত কারণ এরপর দুজনের ঠিকানা সম্পূর্ণ বদলে গেল।
আরও পড়ুন:
হাত বাড়ালেই বনৌষধি: ‘লঙ্কা কাণ্ড’
রহস্য উপন্যাস: পিশাচ পাহাড়ের আতঙ্ক, পর্ব-১৩: আচমকা রাতের পার্টিতে হাজির পুলিশ
গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৬২: প্রথম রবীন্দ্রজীবনী
বর্তমানে যদি তাদের আবার দেখা হয় তবে তারা বলতে পারে “কেমন আছো বা কোথায় আছো? ভালো আছো তো?” কারণ মহুয়া এখন বিশ্বভারতীর একজন অভিজ্ঞ শিক্ষিকা। আর গোরা বহু বছর ধরে সানফ্রান্সিসকোর বাসিন্দা। প্রতিবছরের মতো এবছরও গন্ধে বর্ণে সেজে উঠেছে বৈশাখের শান্তিনিকেতন। নানান অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে এবারও চলবে কবি প্রণাম অনুষ্ঠান। মহুয়া প্রস্তুতি পর্বের কাজ খানিকটা সামলে এসে যখন টিচার্স রুমে বসলো তখন মোবাইলে রিংটোনে বেজে উঠলো—“আমার সকল দুঃখের প্রদীপ জ্বেলে দিবস গেলে করবো নিবেদন…. ”। ছেলের ফোনটা মা তুলে বলল, “হ্যাঁ, বাবু বল! এ সময় তুই ফোন করলি? বৌমা, ধ্রুব সকলে ভালো আছে তো?” ছেলে উত্তরে জানালো যে তারা সকলেই ভালো আছে। আজ বিকেলে সকলে মিলে মায়ের কাছ বোলপুরের বাড়িতে আসছে। শনি ও রবিবার ছুটি কাটিয়ে আবার কর্মস্থলে ফিরবে। কলকাতার ব্যস্ততা একভাবে যেন নিতে পারছে না তাই বৌমাকে অনেক করে রাজি করিয়ে দুদিনের ছুটিতে মায়ের কাছে ফিরতে চায় ছেলে। মহুয়াও জানালো যে, সে এক্ষুনি ইনচার্জকে বলে বাড়ির উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়ছে আর ছেলেকে সাবধানে ফেরার কথা বলল।
ফোন রাখতেই পাশে বসে থাকা কলিগ বলে উঠলো, আজ তো ফিফথ পিরিয়ডের পর মিটিং আছে দিদি। উত্তরে মহুয়া বলল, “না রে আজ আর নয়, তোরা মিটিংটা সামলে নে না, প্লিজ”। কলিগ সাগরিকা বলল, “তুমি অনুষ্ঠানের কনভেনার তাই তোমার থাকাটাই এক্ষেত্রে জরুরি।” মহুয়া উত্তরে বলল, “আমি আর শিউলি তো যুগ্ম আহ্বায়ক তাই ওকে বলে দিচ্ছি একটু সামলে নেবে। আর বুঝতেই তো পারছিস একা থাকা। কত বছর পর ছেলে বৌমা ফিরছে, তাই ফেরার পথে একবার বাজারটাও ঘুরে যাব।” সাগরিকা বলে উঠলো, “হ্যাঁ, এতগুলো বছর ধরে দেখলাম তো দিদি। কীভাবে তুমি একাকিত্বের সঙ্গে লড়তে লড়তে তুমি জীবনের শেষ অঙ্কে এসে দাঁড়িয়েছ। তা আজকে তুমি সব মাছ মাংস কিনে নিয়ে একেবারে বাড়ি ফিরবে?”
ফোন রাখতেই পাশে বসে থাকা কলিগ বলে উঠলো, আজ তো ফিফথ পিরিয়ডের পর মিটিং আছে দিদি। উত্তরে মহুয়া বলল, “না রে আজ আর নয়, তোরা মিটিংটা সামলে নে না, প্লিজ”। কলিগ সাগরিকা বলল, “তুমি অনুষ্ঠানের কনভেনার তাই তোমার থাকাটাই এক্ষেত্রে জরুরি।” মহুয়া উত্তরে বলল, “আমি আর শিউলি তো যুগ্ম আহ্বায়ক তাই ওকে বলে দিচ্ছি একটু সামলে নেবে। আর বুঝতেই তো পারছিস একা থাকা। কত বছর পর ছেলে বৌমা ফিরছে, তাই ফেরার পথে একবার বাজারটাও ঘুরে যাব।” সাগরিকা বলে উঠলো, “হ্যাঁ, এতগুলো বছর ধরে দেখলাম তো দিদি। কীভাবে তুমি একাকিত্বের সঙ্গে লড়তে লড়তে তুমি জীবনের শেষ অঙ্কে এসে দাঁড়িয়েছ। তা আজকে তুমি সব মাছ মাংস কিনে নিয়ে একেবারে বাড়ি ফিরবে?”
আরও পড়ুন:
গা ছমছমে ভৌতিক উপন্যাস: মিস মোহিনীর মায়া, পর্ব-১: জলের তলায় তার শরীরের কোনও অস্তিত্ব নেই!
কে গো অন্তরতর সে…
ভানুসিংহের পদাবলীর ভাষা এবং বিষয় মাহাত্ম্য
মহুয়া জানালো যে, আজকে সব্জি, ফল আর কেজি দুয়েক মটন কিনে ফ্রিজে ঢুকিয়ে দেবে। কারণ, ওরা থাকাকালীন বেরোনোর একটু অসুবিধা। আর দুদিনের জন্য ছেলেটা আসে তাই ওকে বাজারের ব্যাগ ধরাতে একদমই মন চায় না। তবে সকালে ফোন করলেই পছন্দমতো মাছটা দোকানদার বাড়ি পৌঁছে দেয়। আজ আসি, সোমবার ওরা ফিরলেই আমি আসবো তবে একটু বেলা হবে হয়তো বলেই মহুয়া পাঠভবন থেকে বেরিয়ে পড়ল।
বাইরের সব কাজ সামলে যখন বাড়ি ঢুকলো, ঘড়িতে তখন সাড়ে ছ’টা। অনেকদিন পর ছেলে আবার আসছে, তাই সেই তাড়ায় চায়ের কাপে চুমুকটাও পড়েনি। ছেলের ঘরের চাদর, পর্দা, কার্পেট সব বদলানো হল। ফুলদানিতে রজনীগন্ধার স্টিক আর দক্ষিণের জানালার স্লাপে একটি কাঁচের ট্রেতে সাজালো স্কুল থেকে পাওয়া লাল-কমলা অশোক ফুল। এরপর রান্নাঘরে ঢুকে মহুয়া রাঁধতে বসলো বাসন্তী পোলাও, কচি পাঁঠার ঝোল আর শেষপাতের জন্য গাজরের হালুয়া। নাতির যে খুব পছন্দের ডেজার্ট। প্রায় সাড়ে নটা নাগাদ গাড়ির হর্ন শুনে ব্যালকনিতে ছুটে গেলেন মা। দরজা খুলতেই নাতি ঢুকে মহুয়াকে জড়িয়ে ধরে বলে বলল “কী রান্না করছো ঠাম্মি? খুব ভালো গন্ধ বেরোচ্ছে।” ঠাম্মিও জলভরা চোখে উত্তর করল তোমার পছন্দের খাবার দাদুভাই, ফ্রেশ হয়ে টেবিলে এসো দেখতে পাবে। বৌমা বললো, “মা, একটু লিকার চা খাব। আমার মাথার যন্ত্রণা করছে।” ছেলে মায়ের পায়ে প্রণাম করে মাকে জড়িয়ে ধরে বললো, তোমার বানানো খাবারের গন্ধে আমার খিদে আরও বেড়ে গিয়েছে মা। বৌমা বললো, “তোমার যত সব আদিখ্যেতা, প্রতি রবিবারই তো মটন খাচ্ছ!” ছেলে বৌমাকে বলল যে “এটা তোমার বোধগম্য হবে না। মায়ের হাতের খাবারটা শুধু খাবার নয়, এর সঙ্গে মিলেমিশে একাকার হয়েছে স্নেহ-মমতা।” বৌমা কর্কশ গলায় উত্তরে বলল, একগাদা তেল মশলা আর ঘি দিয়ে বানানো স্পাইসি খাবারের টেস্ট তো খুলবেই। নাতি পাল্টা উত্তর করল, “তোমরা এবার থামবে। ঠাম্মি কত কষ্ট করে বাজার করে রান্না করেছে।” নাতি এখন ক্লাস সেভেনের ছাত্র। এত বছর সে নিজের ঠাম্মিকে খানিকটা হলেও চিনেছে তাই মায়ের কথাগুলো ওর কানে আর ভালো লাগছিল না। বাবার উদ্দেশ্যে নাতি বললো, তাদের ঠাম্মিকে যেন তাদের সঙ্গেই কলকাতার বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। একা একা এইভাবে একজন বয়স্ক মানুষের থাকাটা খুবই কষ্টের। সকালে বাবা মা বেরিয়ে যাওয়ার পর সারাটা দিন একা থাকতে তারও যেন আর ভালো লাগে না। মহুয়া চায়ের ট্রে-টা নিয়ে ঘরে ঢুকতেই সবাই চুপ। চা শেষ করে সকলে মিলে হাজির হল ডিনার টেবিলে। ওদেরকে খাইয়ে ঠাম্মি যখন রান্নাঘর গুছাচ্ছে তখন নাতি পেছন থেকে ঠাম্মিকে জড়িয়ে ধরে বলল এবার তুমি খেয়ে নাও, অনেকটা রাত হয়েছে। তুমি চলো না আমাদের সঙ্গে কলকাতার ফ্ল্যাটে, সকলে একসঙ্গে থাকবো। ঠাম্মি হাসতে হাসতে বলল, এই তো বেশ আছি, স্কুল আর বাড়ি।
বাইরের সব কাজ সামলে যখন বাড়ি ঢুকলো, ঘড়িতে তখন সাড়ে ছ’টা। অনেকদিন পর ছেলে আবার আসছে, তাই সেই তাড়ায় চায়ের কাপে চুমুকটাও পড়েনি। ছেলের ঘরের চাদর, পর্দা, কার্পেট সব বদলানো হল। ফুলদানিতে রজনীগন্ধার স্টিক আর দক্ষিণের জানালার স্লাপে একটি কাঁচের ট্রেতে সাজালো স্কুল থেকে পাওয়া লাল-কমলা অশোক ফুল। এরপর রান্নাঘরে ঢুকে মহুয়া রাঁধতে বসলো বাসন্তী পোলাও, কচি পাঁঠার ঝোল আর শেষপাতের জন্য গাজরের হালুয়া। নাতির যে খুব পছন্দের ডেজার্ট। প্রায় সাড়ে নটা নাগাদ গাড়ির হর্ন শুনে ব্যালকনিতে ছুটে গেলেন মা। দরজা খুলতেই নাতি ঢুকে মহুয়াকে জড়িয়ে ধরে বলে বলল “কী রান্না করছো ঠাম্মি? খুব ভালো গন্ধ বেরোচ্ছে।” ঠাম্মিও জলভরা চোখে উত্তর করল তোমার পছন্দের খাবার দাদুভাই, ফ্রেশ হয়ে টেবিলে এসো দেখতে পাবে। বৌমা বললো, “মা, একটু লিকার চা খাব। আমার মাথার যন্ত্রণা করছে।” ছেলে মায়ের পায়ে প্রণাম করে মাকে জড়িয়ে ধরে বললো, তোমার বানানো খাবারের গন্ধে আমার খিদে আরও বেড়ে গিয়েছে মা। বৌমা বললো, “তোমার যত সব আদিখ্যেতা, প্রতি রবিবারই তো মটন খাচ্ছ!” ছেলে বৌমাকে বলল যে “এটা তোমার বোধগম্য হবে না। মায়ের হাতের খাবারটা শুধু খাবার নয়, এর সঙ্গে মিলেমিশে একাকার হয়েছে স্নেহ-মমতা।” বৌমা কর্কশ গলায় উত্তরে বলল, একগাদা তেল মশলা আর ঘি দিয়ে বানানো স্পাইসি খাবারের টেস্ট তো খুলবেই। নাতি পাল্টা উত্তর করল, “তোমরা এবার থামবে। ঠাম্মি কত কষ্ট করে বাজার করে রান্না করেছে।” নাতি এখন ক্লাস সেভেনের ছাত্র। এত বছর সে নিজের ঠাম্মিকে খানিকটা হলেও চিনেছে তাই মায়ের কথাগুলো ওর কানে আর ভালো লাগছিল না। বাবার উদ্দেশ্যে নাতি বললো, তাদের ঠাম্মিকে যেন তাদের সঙ্গেই কলকাতার বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। একা একা এইভাবে একজন বয়স্ক মানুষের থাকাটা খুবই কষ্টের। সকালে বাবা মা বেরিয়ে যাওয়ার পর সারাটা দিন একা থাকতে তারও যেন আর ভালো লাগে না। মহুয়া চায়ের ট্রে-টা নিয়ে ঘরে ঢুকতেই সবাই চুপ। চা শেষ করে সকলে মিলে হাজির হল ডিনার টেবিলে। ওদেরকে খাইয়ে ঠাম্মি যখন রান্নাঘর গুছাচ্ছে তখন নাতি পেছন থেকে ঠাম্মিকে জড়িয়ে ধরে বলল এবার তুমি খেয়ে নাও, অনেকটা রাত হয়েছে। তুমি চলো না আমাদের সঙ্গে কলকাতার ফ্ল্যাটে, সকলে একসঙ্গে থাকবো। ঠাম্মি হাসতে হাসতে বলল, এই তো বেশ আছি, স্কুল আর বাড়ি।
আরও পড়ুন:
উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৩৪: স্বপ্ন ও দুঃস্বপ্নের ‘রাত-ভোর’
পঞ্চমে মেলোডি, পর্ব-১০: কিশোর কণ্ঠের উপর যেন এক অলিখিত দাবি ছিল পঞ্চমের
স্বাদে-আহ্লাদে: আম দিয়ে তৈরি এই লোভনীয় স্বাদের আচার খেয়েছেন?
নাতি ছেলে আর বৌমার সঙ্গে আড্ডা, খাওয়া দাওয়া, গান বাজনা এইসবের মধ্যে যেন ঝড়ের গতিতে কেটে গেল বাকি দুটো দিন। সোমবার ওদের লাঞ্চ বক্স রেডি করে গাড়িতে তুলে দিল সকাল সাড়ে আটটার মধ্যে। ছেলে পছন্দের পোস্তর বড়া, কালো জিরে, কাঁচা লঙ্কার চেরা দিয়ে পাবদার ঝোল আর তেঁতুল সহযোগে মৌরলা মাছের টক ছিল সেদিনের মেনুতে।
সোমবার সকাল হতেই যেন বোলপুরের বাড়িটা একেবারে ফাঁকা হয়ে গেল। মহুয়া, রান্নাঘরটা মোটামুটি একটু গুছিয়ে বেরিয়ে পড়ল পাঠভবনের উদ্দেশ্যে। কবি প্রণামের আগে সোমবারটা ছিল শেষ রিহার্সালের দিন, তাই প্রায় ছটা নাগাদ বাড়ি ফিরল মহুয়া। পরের দিন ভোরে উঠে নিজেকে প্রস্তুত করলো কবি প্রণাম অনুষ্ঠানের জন্য। সেদিন মহুয়ার পরনে ছিল কালো পাড়ের সাদা তাঁত, কপালে কালো বড়ো টিপ আর ভ্রমর কালো কাজলে সেজে উঠেছিল নিষ্প্রভ চোখদুটি। খোপায় তুলে নিয়েছিল সাদা ফুলের রাশি। কবিগুরুর জন্মদিন হওয়া সত্বেও মহুয়ার কাছে আজকের দিনের তাৎপর্য একটু অন্যরকম। রাস্তায় চলতে চলতেই পুরানো স্মৃতির কিছু এলোমেলো রোমন্থনে মহুয়ার চোখ দুটো জলে ভরে উঠল। তবে পাঠভবনে ঢোকার পরে ছোট ছোট বন্ধুদের সঙ্গে মিশতেই মনের রাশ অনেকটাই হালকা হল। অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই মহুয়ার চোখ বলল প্রেসিডেন্টের পাশে বসে থাকা মানুষটার দিকে। সাদা ধুতি-পাঞ্জাবি আর কালো ফ্রেমের গোল চশমায় লম্বা, ফর্সা গড়নের মানুষটাকে যেন অনেকদিনের চেনা মনে হতে লাগল। কলিগ সাগরিকাকে তৎক্ষণাৎ মহুয়া জিজ্ঞাসাবাদ করে জানতে পারলো উনি খ্যাতনামা বিজ্ঞানী গোরাচাঁদ মুখোপাধ্যায়। যিনি বহুকাল বিদেশে থেকে সাপের বিষের উপর গবেষণা চালিয়েছেন। তার সঞ্চয়ে রয়েছে শতাধিক পেটেন্ট এবং অসংখ্য আন্তর্জাতিক পুরস্কার। বর্তমানে তিনি দিল্লির স্থায়ী বাসিন্দা। গত মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছিল যে তিনি আজকের বিশেষ অতিথি হিসাবে আসবেন। তিনি প্রেসিডেন্টের পরিচিত মহলেরই বিশিষ্ট একজন। মহুয়া ক্ষণিকের জন্য বাকরুদ্ধ হয়ে গেল। তার অতি পরিচিতি গোরাদা বয়সের ভারে যেন নুয়ে পড়েছে। মাথা ভর্তি সাদা চুল আর গাল ভর্তি খোঁচা খোঁচা সাদাকালো দাড়ির ভিড়ে হারিয়ে গিয়েছে, মহুয়ার সেদিনের গোরাদা। অনুষ্ঠান প্রায় শেষ অঙ্কে এসে পৌঁছিয়েছে। এবার ছাত্র-ছাত্রীদের সঙ্গে মহুয়া সমবেত সংগীত পরিবেশনের জন্য প্রস্তুত হল। কবিগুরুর পুজো পর্যায়ের গান ধরল সকলে—
“কার মিলন চাও বিরহী…
তাহারে কোথা খুঁজেছ ভব অরণ্যে কুটিল জটিল গহনে,
শান্তিসুখহীন ওরে মন।
দেখ দেখ রে চিত্তকমলে
চরণপদ্ম রাজে হায়।
অমৃত জ্যোতি কিবা সুন্দর ওরে মন।”
গুরুদেবের ১৬৩তম জন্ম দিবসে এই ভাবে যে মহুয়ার খোঁজ পেয়ে যাবে তা ছিল গোরাচাঁদের চিন্তাভাবনার অতীত।
সোমবার সকাল হতেই যেন বোলপুরের বাড়িটা একেবারে ফাঁকা হয়ে গেল। মহুয়া, রান্নাঘরটা মোটামুটি একটু গুছিয়ে বেরিয়ে পড়ল পাঠভবনের উদ্দেশ্যে। কবি প্রণামের আগে সোমবারটা ছিল শেষ রিহার্সালের দিন, তাই প্রায় ছটা নাগাদ বাড়ি ফিরল মহুয়া। পরের দিন ভোরে উঠে নিজেকে প্রস্তুত করলো কবি প্রণাম অনুষ্ঠানের জন্য। সেদিন মহুয়ার পরনে ছিল কালো পাড়ের সাদা তাঁত, কপালে কালো বড়ো টিপ আর ভ্রমর কালো কাজলে সেজে উঠেছিল নিষ্প্রভ চোখদুটি। খোপায় তুলে নিয়েছিল সাদা ফুলের রাশি। কবিগুরুর জন্মদিন হওয়া সত্বেও মহুয়ার কাছে আজকের দিনের তাৎপর্য একটু অন্যরকম। রাস্তায় চলতে চলতেই পুরানো স্মৃতির কিছু এলোমেলো রোমন্থনে মহুয়ার চোখ দুটো জলে ভরে উঠল। তবে পাঠভবনে ঢোকার পরে ছোট ছোট বন্ধুদের সঙ্গে মিশতেই মনের রাশ অনেকটাই হালকা হল। অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই মহুয়ার চোখ বলল প্রেসিডেন্টের পাশে বসে থাকা মানুষটার দিকে। সাদা ধুতি-পাঞ্জাবি আর কালো ফ্রেমের গোল চশমায় লম্বা, ফর্সা গড়নের মানুষটাকে যেন অনেকদিনের চেনা মনে হতে লাগল। কলিগ সাগরিকাকে তৎক্ষণাৎ মহুয়া জিজ্ঞাসাবাদ করে জানতে পারলো উনি খ্যাতনামা বিজ্ঞানী গোরাচাঁদ মুখোপাধ্যায়। যিনি বহুকাল বিদেশে থেকে সাপের বিষের উপর গবেষণা চালিয়েছেন। তার সঞ্চয়ে রয়েছে শতাধিক পেটেন্ট এবং অসংখ্য আন্তর্জাতিক পুরস্কার। বর্তমানে তিনি দিল্লির স্থায়ী বাসিন্দা। গত মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছিল যে তিনি আজকের বিশেষ অতিথি হিসাবে আসবেন। তিনি প্রেসিডেন্টের পরিচিত মহলেরই বিশিষ্ট একজন। মহুয়া ক্ষণিকের জন্য বাকরুদ্ধ হয়ে গেল। তার অতি পরিচিতি গোরাদা বয়সের ভারে যেন নুয়ে পড়েছে। মাথা ভর্তি সাদা চুল আর গাল ভর্তি খোঁচা খোঁচা সাদাকালো দাড়ির ভিড়ে হারিয়ে গিয়েছে, মহুয়ার সেদিনের গোরাদা। অনুষ্ঠান প্রায় শেষ অঙ্কে এসে পৌঁছিয়েছে। এবার ছাত্র-ছাত্রীদের সঙ্গে মহুয়া সমবেত সংগীত পরিবেশনের জন্য প্রস্তুত হল। কবিগুরুর পুজো পর্যায়ের গান ধরল সকলে—
“কার মিলন চাও বিরহী…
তাহারে কোথা খুঁজেছ ভব অরণ্যে কুটিল জটিল গহনে,
শান্তিসুখহীন ওরে মন।
দেখ দেখ রে চিত্তকমলে
চরণপদ্ম রাজে হায়।
অমৃত জ্যোতি কিবা সুন্দর ওরে মন।”
গুরুদেবের ১৬৩তম জন্ম দিবসে এই ভাবে যে মহুয়ার খোঁজ পেয়ে যাবে তা ছিল গোরাচাঁদের চিন্তাভাবনার অতীত।
আরও পড়ুন:
হার্ট অ্যাটাক নীরবেও হতে পারে! কোন উপসর্গ দেখে সতর্ক হবেন? জেনে নিন ডাক্তারবাবুর পরামর্শ
এগুলো কিন্তু ঠিক নয়, পর্ব-১১: লিকার চা খাওয়া কি সত্যই শরীরের পক্ষে ভালো?
বাঙালির মৎস্যপুরাণ, পর্ব-৫৪: মাছের বাজারের দুনিয়ায় আলিপুরের ‘নেট বাজার’ তালিকায় শীর্ষে
অনুষ্ঠান শেষ হতেই ছাত্র-ছাত্রীরা ঘিরে ধরল তাদের বিশিষ্ট অতিথিকে। তাদের ভিড় সামলে মহুয়ার খোঁজ করতেই জানতে পারলো শারীরিক অসুস্থতার কারণে মিনিট পাঁচেক আগে সে বেরিয়ে গেছে বাড়ির উদ্দেশ্যে। গোরাচাঁদ মুখোপাধ্যায়ও আর দেরি না করে গাড়িতে উঠে পড়ল তার বছর দশেকের নাতনিকে সঙ্গে নিয়ে। ক্যাম্পাসের মধ্যে খানিকটা পথ পেরোতেই দেখলো যে মহুয়া মাথা নিচু করে হেঁটে চলেছে। ড্রাইভারকে থামাতে বলে গোরাচাঁদ গাড়ি থেকে নেমে মুখোমুখি হল মহুয়ার। একেবারে বলে উঠলো, “চিনতে পারছো আমায়?”
মহুয়া মৃদু স্বরে উত্তর —”বালিগঞ্জ পাঠভবনের একাদশ শ্রেণির কৃতি ছাত্র গোরাচাঁদ মুখোপাধ্যায়।” গোরাচাঁদ বলে উঠলো, “মহুয়া, তুমি কি আমায় এড়িয়ে যাচ্ছ? প্রায় তিন দশক পর আমাদের দেখা হল। কলকাতা ছেড়ে এত দূরে এভাবে তোমার সঙ্গে দেখা হয়ে যাবে তা ভাবতে পারিনি। এখানকার তুমি শিক্ষিকা হয়েছো দেখে আজ খুব ভালো লাগছে। এখানে কি তুমি সপরিবারে থাকো?” মহুয়া বলে উঠলো, “আমি তো শুধু তোমার দেওয়া স্মৃতিটুকু আঁকড়েই কাটিয়ে দিলাম বছরের পর বছর। তোমার কথা বলো।” বিজ্ঞানী গোরাচাঁদ বলল, তিনি এখন সস্ত্রীক দিল্লিতেই থাকেন। বছর পাঁচেক আগে একটা বিমান দুর্ঘটনায় নিজের একমাত্র মেয়ে ও জামাইকে হারিয়েছেন। তারপরই বিদেশের সমস্ত পর্ব মিটিয়ে দেশে ফেরা। এখন তাদের সম্বল বছর দশকের একটি নাতনি। মহুয়ার চোখ পরল গাড়ির ব্যাকশিটে বসে থাকা এক অ্যাংলো ইন্ডিয়ান বাচ্চা মেয়ের দিকে। গোরাচাঁদ প্রশ্ন করল, “মহুয়া, তোমার পরিবারে কে কে আছেন?”
প্রশ্ন শুনে অঝোরে কাঁদতে থাকল মহুয়া। ওর কাঁধে হাত রেখে গোরাচাঁদ তখন তাকে থামানোর চেষ্টা করল। নিজেকে খানিকটা সামলে মহুয়া জানালো, বহু বছর আগে পঁচিশে বৈশাখের দিন তাদের মিলনে যে বীজ বপন হয়েছিল সে আজ কলকাতার নামকরা গাইনোকোলজিস্ট গগনেন্দ্র চক্রবর্তী। রাঁচিতে মাসির বাড়িতে পুত্র সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার পরেই আত্মীয় পরিজনের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে বাবা-মার সঙ্গে মহুয়া স্থায়ীভাবে বোলপুরে বসবাস শুরু করে। প্রতিবেশীরা জানতো যে, বিবাহের বছর খানেকের মধ্যেই একটি পথ দুর্ঘটনায় স্বামীকে হারিয়ে ফেলে মহুয়া আশ্রয় নেয় বাবার ছায়ায়। সবটা শুনে পৃথিবী বিখ্যাত বিজ্ঞানী তখন লজ্জায়, অপমানে ভাষা হারালো। মহুয়া আসি বলে গুটি গুটি পায়ে সামনের দিকে এগিয়ে চলল।
মহুয়া মৃদু স্বরে উত্তর —”বালিগঞ্জ পাঠভবনের একাদশ শ্রেণির কৃতি ছাত্র গোরাচাঁদ মুখোপাধ্যায়।” গোরাচাঁদ বলে উঠলো, “মহুয়া, তুমি কি আমায় এড়িয়ে যাচ্ছ? প্রায় তিন দশক পর আমাদের দেখা হল। কলকাতা ছেড়ে এত দূরে এভাবে তোমার সঙ্গে দেখা হয়ে যাবে তা ভাবতে পারিনি। এখানকার তুমি শিক্ষিকা হয়েছো দেখে আজ খুব ভালো লাগছে। এখানে কি তুমি সপরিবারে থাকো?” মহুয়া বলে উঠলো, “আমি তো শুধু তোমার দেওয়া স্মৃতিটুকু আঁকড়েই কাটিয়ে দিলাম বছরের পর বছর। তোমার কথা বলো।” বিজ্ঞানী গোরাচাঁদ বলল, তিনি এখন সস্ত্রীক দিল্লিতেই থাকেন। বছর পাঁচেক আগে একটা বিমান দুর্ঘটনায় নিজের একমাত্র মেয়ে ও জামাইকে হারিয়েছেন। তারপরই বিদেশের সমস্ত পর্ব মিটিয়ে দেশে ফেরা। এখন তাদের সম্বল বছর দশকের একটি নাতনি। মহুয়ার চোখ পরল গাড়ির ব্যাকশিটে বসে থাকা এক অ্যাংলো ইন্ডিয়ান বাচ্চা মেয়ের দিকে। গোরাচাঁদ প্রশ্ন করল, “মহুয়া, তোমার পরিবারে কে কে আছেন?”
প্রশ্ন শুনে অঝোরে কাঁদতে থাকল মহুয়া। ওর কাঁধে হাত রেখে গোরাচাঁদ তখন তাকে থামানোর চেষ্টা করল। নিজেকে খানিকটা সামলে মহুয়া জানালো, বহু বছর আগে পঁচিশে বৈশাখের দিন তাদের মিলনে যে বীজ বপন হয়েছিল সে আজ কলকাতার নামকরা গাইনোকোলজিস্ট গগনেন্দ্র চক্রবর্তী। রাঁচিতে মাসির বাড়িতে পুত্র সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার পরেই আত্মীয় পরিজনের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে বাবা-মার সঙ্গে মহুয়া স্থায়ীভাবে বোলপুরে বসবাস শুরু করে। প্রতিবেশীরা জানতো যে, বিবাহের বছর খানেকের মধ্যেই একটি পথ দুর্ঘটনায় স্বামীকে হারিয়ে ফেলে মহুয়া আশ্রয় নেয় বাবার ছায়ায়। সবটা শুনে পৃথিবী বিখ্যাত বিজ্ঞানী তখন লজ্জায়, অপমানে ভাষা হারালো। মহুয়া আসি বলে গুটি গুটি পায়ে সামনের দিকে এগিয়ে চলল।